
ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার মান বজায় রাখা ও হাসপাতালের ভেতরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি ও বহিরাগত অসাধুচক্রের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়।
একই সঙ্গে হাসপাতালের ডিউটি রোস্টার যথাযথভাবে মেনে চলা, চিকিৎসক ও কর্মীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করার বিষয়েও আলাদা নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডা. আবু সাজ্জাদ মোহাম্মদ সায়েম সাক্ষরিত নোটিশ মাধ্যমে জানানো হয়, সরকারি নির্দেশনা অনুসারে প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টার পর ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিগণ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের ভিজিট করতে পারবেন। ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিগণ সরকরী নির্দেশনা না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে এর দায় নিবেননা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত ২০ অক্টোবর ভূরুঙ্গামারীর সাংবাদিক মো. মাইদুল ইসলাম তথ্য সংগ্রহ করতে হাসপাতাল গেলে স্টাফ আরিফুল ইসলাম আপেল ও তার সঙ্গে থাকা কিছু অসাধুচক্র তাকে বাধা দেয়। পরের দিন ডেঙ্গু–সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ শেষে হাসপাতাল ছাড়ার সময় একই স্টাফ পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে আটকে রাখার চেষ্টা করে এবং মিথ্যা অভিযোগে পুলিশে দেওয়ার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় সাংবাদিক মাইদুল থানাসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন এবং বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এর পরে স্টাফ আপেল পাল্টা একটি অভিযোগে সাংবাদিক মাইদুলসহ হাসপাতালের কর্মচারী রবিউল এবং সাংবাদিক মো. রফিকুল ইসলামের নাম জড়ান।
৩০ নভেম্বর স্টাফ আপেলের নেতৃত্বে বহিরাগত ব্যক্তি ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি গণদের নিয়ে ‘হাসপাতালপাড়া’ ব্যানারে অফিসের অনুমতি ছাড়াই একটি মানববন্ধন আয়োজন করা হয়, যেখানে তিনি নিজেও বক্তব্য দেন-যা সরকারি চাকরি বিধির পরিপন্থী।
মানববন্ধনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে ও সংশ্লিষ্টদের দালালচক্র হিসেবে আখ্যা দিয়ে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপ জন মিত্র এবং ওসি আল হেলাল মাহমুদ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
ঘটনার ধারাবাহিকতায় ১৬ নভেম্বর (রবিবার) আনুমানিক সকাল ১১টার সময় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কুড়িগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দল ভূরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযানের সময় বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সিনিয়র এমআইও আরিফুল ইসলামকে হাসপাতালের ভেতরে অনিয়মের অভিযোগে আটক করা হয়। পরে তিনি মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান। দুদকের প্রতিনিধিদল হাসপাতালের সেবা প্রক্রিয়া, উপস্থিতি রেজিস্টার, ওষুধ সরবরাহ ব্যবস্থা এবং দালাল–কর্মকর্তা সংযোগসহ নানা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে।
স্থানীয় রোগী ও স্বজনরা জানান, ঘটনা ও অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি, স্টাফদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং রোগীসেবা উন্নত করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলে বর্তমানে ওয়ার্ড, করিডোর থেকে শুরু করে সেবাদান ব্যবস্থার বিভিন্ন জায়গায় আগের তুলনায় শৃঙ্খলা ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে