অনেক লিখেছি, অনেক বলেছি, এটাই হয়তো বর্তমান সরকার এবং শিক্ষকদের নিয়ে আমার শেষ লেখা। ১৯৭১ সাল পরবর্তী ৫৪ বছর ধরে বাংলাদেশের এই শ্রেণী অর্থাৎ যারা মানুষ গড়ার কারিগর, যারা জাতির মেরুদন্ড তাদেরকে মেরুদন্ড সোজা করতে দেয়া হয়নি। কারণ কি জানেন? আজকে আর লুকিয়ে বলবো না, খোলামেলা বলছি, -এই শিক্ষকগণের পেটে যদি ভাত থাকে, সঠিক চিকিৎসা পায়, মৌলিক মানবাধিকার গুলো সুসংহত হয় তাহলে তো তাঁরা বাড়ির বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে টেনশন না করে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শিক্ষা দেবেন। আর এখানেই এই জাতির শীর্ষ পদে থাকা রাজনীতিবিদ, সরকারি আমলা, সচিব কিংবা মন্ত্রী, মিনিস্টার দের ভয়, "যে তারা ১৮ কোটি মানুষের উপর নোংরা রাজনীতির চর্চা করতে পারবেনা"। কারণ উপযুক্ত শিক্ষা পেয়ে ছাত্র-ছাত্রী কিংবা শিক্ষার্থীরা যদি আদর্শ মানুষ হয়, তাহলে তারা ঘুষ দেবেও না, নেবেও না এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরের সচিব, আমলারা ঘুষ বঞ্চিত হবে। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে পারলে রাজনীতিবিদরা তাদের নোংরা রাজনীতির ছড়ি তাদের উপর ঘোরাতে পারবে না। উপযুক্ত শিক্ষা পেয়ে শিক্ষার্থীরা যখন আদর্শ মানুষ হবে তখন তারা তো তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে আদর্শ মেনে অনৈতিক কাজকর্ম করবেন না যা এদেশকে লুটেপুটে খাওয়া ওই চক্রটির জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
সুতরাং এ জাতিকে নির্বোধ, কুলাঙ্গার, অথর্ব, জ্ঞানের দিক দিয়ে পঙ্গু, সচেতন না হতে দিয়ে জ্ঞানহীন করে রাখলে এ দেশকে যারা লুটেপুটে খায় তাদের জন্য রাস্তাটা পরিষ্কার থাকে। কারণ টেনশন মুক্ত শিক্ষক সমাজ যদি সঠিক শিক্ষা দেয় তাহলে ওই নষ্ট শ্রেণীর জন্যই তো সমস্যা হয়, কারণ, শিক্ষিত সমাজের কাছ থেকে এদেশের সম্পদ বিনা পরিশ্রমে লুটেপুটে খাওয়ার ক্ষেত্রে তারা আর সুযোগ পাবে না।
"মানুষ গড়ার কারিগর", কিংবা "শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড", কিংবা "কোন শিক্ষাই শিক্ষকের ঊর্ধ্বে নহে" কিংবা "আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দেব" এই বিষয়গুলো জানার পরেও সেগুলোকে অবমূল্যায়ন করছে কারা? ওরা এই দুষ্টচক্র, যারা স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৪ বছর পরেও এসে এ জাতিকে নির্বোধ বানিয়ে রাখতে চায়। যাতে এই শিক্ষকগণের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে আসা প্রজন্ম কখনই সঠিক জ্ঞানের দিশা না পায় এবং তাদের গোলামী করতে জীবন শেষ করে।
কারা শিক্ষা ধ্বংসর ষড়যন্ত্র ধারাবাহিকভাবে করছে
==================================
(১) রাজনীতিবিদ কর্তৃক শিক্ষকগণকে অবহেলাঃ
-----------------------------------------------------------------
যদি শিক্ষক সমাজ সঠিক শিক্ষা দেয়, আদর্শ ছাত্র ছাত্রী তৈরি করে, তাহলে আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একটি ছেলে বা মেয়ে ভবিষ্যতে কখনোই কারো অন্যায় আদেশ মানবে না, দুর্নীতি করবে না, লুট-পাটে যুক্ত হবে না, অনৈতিক কাজ করতে ঘুষ নিবে না, নিজের জীবনের সুশৃংখল চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী হয়ে নিজের জীবন বরবাদ করবে না, চাঁদাবাজি, মাস্তানি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে যাবে না। কারণ সবাই শিক্ষিত ও আত্মমর্যাদা পূর্ণ মানুষের মত মানুষ হলে ওইসব দুষ্ট রাজনীতিবিদ কোথায় তাদের চাঁদাবাজ কর্মী পাবেন? কিভাবে তাদেরকে দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে দলের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখবেন? কিংবা দল চালাতে গিয়ে কিভাবে তাদের চা, সিঙ্গারা খাওয়ার কর্মী খুঁজে পাবেন? তাহলে এইসব নোংরা রাজনীতিবিদ কি কখনো সঠিক শিক্ষাব্যবস্থা চাইবেন? সঠিক শিক্ষা দিতে শিক্ষকদের মূল্যায়ন করতে দেবেন??
(২) ঘুষখোর সরকারি আমলা, কর্মকর্তা, কর্মচারীঃ
------------------------------------------------------------------
একজন শিক্ষক যখন আদর্শ শিক্ষা দেবেন সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা আদর্শ মানুষ হলে ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে নিজেরা কখনো ঘুষ নেবেন না, কাউকে নিতেও দেবেন না। এর ফলে সরকারি আমলা, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা যারা সরকারের সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা এবং বেতন পাবার পরেও চিরাচরিত অনৈতিক ঘুষ নিতে অভ্যস্ত তাদের ঘুষ, দুর্নীতির পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তাহলে তারা কি চাইবেন এই আদর্শ ছাত্র ছাত্রী তৈরি করতে শিক্ষকগণ মনোযোগ দিক? তারা তো সব সময় চাইবেন, এই জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তথা ছাত্র-ছাত্রীরা কখনোই যেন তাদের নীতি-নৈতিকতা সম্পন্ন শিক্ষা নিয়ে মানুষ না হয়, যারা নিজেরা কোথাও ঘুষ দেবে না, ঘুষ খেতেও দেবে না কিংবা যেকোনো দুর্নীতি করতে গেলে বাধা দেবে। কাজেই সেই শিক্ষাব্যবস্থার সহযোগিতা তারা কখনোই করবেন না। কারণ আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদেরকে গ্রহণ করবে না। তারা ক্রমানুযায়ী তাদের চাকরি হারাবেন, ঘুষ, দুর্নীতি বঞ্চিত হবেন এবং আকাশচুম্বী স্বপ্নগুলো ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবে। কাজেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের আমলারা কখনোই চায়না এই শিক্ষকগণের মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম আদর্শ মানুষ হয়ে গড়ে উঠুক।
(৩) রাষ্ট্রের শত্রু বা ভিনদেশী দের রাজনীতিঃ
------------------------------------------------------
বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ, যা একাধিক রাষ্ট্র দিয়ে পরিবেষ্টিত। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই এ রাষ্ট্রের প্রতিবেশীরা এ রাষ্ট্রটিকে নিজেদের করদ রাজ্য বা অঙ্গরাজ্য মনে করে আসছে। এই জাতির শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য তারা এহেন কোন কর্ম নাই যা করেনি। কারণ এটা শুধু আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিষয় নয় বরং বিশ্ব শাসনব্যবস্থায় যারা ক্ষমতাসীন তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্ট্রকেই নির্বোধ, মেধাহীন, অনুন্নত করে রাখার যত চেষ্টা তারা সব সময় করে যায়। কেননা মেধা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্প সবকিছুতেই এগিয়ে থাকা কোন জাতি অন্য কোন রাষ্ট্রের গোলামী করতে চায় না। যখন তাদেরকে অশিক্ষা, কুশিক্ষা দিয়ে মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়া যায়, অবাধ সেক্সের সামাজিকতা চালু করা যায়, ঘুষ, সুদ, দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত করা যায় তখন তারা নিজেদের দেশেই নিজেরাই কাউকে সম্মান করে না, তারা নিজেদেরকে নিয়েই ব্যস্ত হয় ফলে রাষ্ট্রের চিন্তা তাদের মস্তিষ্ক থেকে উধাও হয়ে যায়। এর ফলে তারা তাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তার কথা চিন্তা করতে পারে না। তারা না হতে পারে গবেষক না হতে পারে বিজ্ঞানী না করতে পারে নতুন কোন কিছু আবিষ্কার। ফলে বিশ্ব যখন এগিয়ে চলে তখনও তারা সবকিছুই আমদানি করে, এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় তারা মনোযোগ না দেয়ায় রাষ্ট্র সব সময় বিশৃঙ্খলায় পরিপূর্ণ থাকে। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সচেতন না হবার কারণে তারা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নিয়ে ভাবতে পারেনা। এই সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে মেধাহীন, অর্থনীতিতে দুর্বল, প্রযুক্তিতে অনভিজ্ঞ, এমন জাতি বা রাষ্ট তৈরি করে যাতে এই জাতি বা রাষ্ট্রকে তারা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই কাজগুলো তারা এই রাষ্ট্রের অনৈতিক দুর্নীতিবাজ রাষ্ট্রের অমঙ্গল চাওয়া রাজনীতিবিদদের দিয়েই সম্পন্ন করে।
ইউনুস সরকার কি জুলাই অভ্যুত্থানের ফল? তাদের কাজ কি?
==================================
দুই সহস্রাধিক ছাত্র-জনতার তাজা রক্তের বিনিময়ে এবং প্রায় অর্ধ লক্ষ পঙ্গুত্ব বরণ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল তা কি বাস্তবে হয়েছে? আন্দোলনটাই ছিল বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়া এবং ফ্যাসিস্ট মুক্ত স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে অন্য রাষ্ট্রের গোলামী বা আধিপত্য থেকে বেরিয়ে আসা। তা কি ডক্টর ইউনুসের সরকার করতে পেরেছে? বৈষম্য দূর করতে যে সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হলো তারা বৈষম্য কি বোঝেন?
(১) প্রকাশ্য বৈষম্যঃ
-------------------------
বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষক বেসরকারি এমপিও ভুক্ত। অর্থাৎ বাংলাদেশের সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি ৫ হাজার হয় তাহলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। এই সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার মাধ্যমে যেসব ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা পেয়ে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, গবেষক, সরকারি কর্মকর্তা, রাষ্ট্রের শৃংখলায় নিয়োজিত বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তথা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করে ঠিক একইভাবে ৩০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৬ লক্ষাধিক শিক্ষকের শিক্ষার মাধ্যমে একই ধরনের মানুষ গড়া হয়।
তাহলে প্রশ্ন হল, একই ধরনের মানুষ গড়ার কারিগর হয়ে সরকারি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী যেখানে শতভাগ উৎসব ভাতা,, ৪৫-৫০ শতাংশ কিংবা শতভাগ আবাসন ভাতা প্রাপ্ত হন, সেখানে বেসরকারি এই বিরাট শিক্ষকগণের বাড়ি ভাড়া কত? ১০০০ টাকায় বর্তমান বাংলাদেশে কি কোন বাড়ি ভাড়া পাওয়া যায় একটা শিক্ষকের থাকার জন্য? ৫০০ টাকায় কি মাসে কোন চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে এই বাংলাদেশে? অনেকের না বুঝে শিক্ষক আন্দোলনকে সমালোচনা করেন। অনেকে বলেন শিক্ষক পন প্রাইভেট পড়ান কোচিং করান আরে বাবা অংক ইংরেজি গণিত পদার্থ কিংবা রসায়ন বাদে বাংলাদেশে কি আর কোন সাবজেক্ট নেই? এই কয় শ্রেণীর শিক্ষক হয়তো প্রাইভেট বা টিউশন করান। বাকি আরো ১২-১৫ টি বিষয়ের লক্ষ লক্ষ শিক্ষক কি করবেন? আর এটি তো কোন যৌক্তিক প্রশ্ন নয়। যেখানে সরকারি একটা শ্রেণি ৪০ হাজার টাকা বেতন পায়, সেইখানে একই কাজ করে একটা শিক্ষককে কেন ২০ হাজার টাকা দেয়া হবে? এই পার্থক্য বা বৈষম্য দূর করতেই তো এই সরকারের সৃষ্টি তাই না? এই সরকার আসার পর কি করেছে? কোন ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করছে? না করতে পারলে তার কারণ কি-সেটা কি পরিষ্কার করেছে?
এই সরকার তো কোন রাজনৈতিক সরকার নয়, যে তাদের ভবিষ্যৎ উদ্দেশ্য পরিকল্পনা আছে একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের ক্ষমতায় আসতে হবে। সে কারণে তারা বর্তমান বৈষম্য দূর না করে ভবিষ্যৎ নির্বাচনী ইশতেহার দিয়ে জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসার চিন্তা করছেন - তেমন কি? নয়তো? তাহলে তারা বৈষম্য দূর করছেন না কেন?
ইউনুস সরকার কারো কাছে মাথা বিক্রি করছেন?
=================================
সম্প্রতি অক্টোবর মাসের ১২ তারিখ বা যেদিন থেকে শিক্ষক আন্দোলন শুরু হলো, তার এক দুই দিন পর থেকে একটি রাজনৈতিক দল ক্রমাগত ভবিষ্যৎ ক্ষমতায় আসলে শিক্ষাকে জাতীয়করণ করার ঘোষণা দিচ্ছেন। আবার এমন কথাও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে যে, ইউনুস সরকার শিক্ষকদের দাবি মেনে নিতে চাইলেও একটি রাজনৈতিক দলের চাপের মুখে তারা তা করতে পারছেন না। এই রাজনৈতিক দল কারা? প্রকাশ করে দিন। জাতির সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হোক, কারা এই শিক্ষকদের অমঙ্গল করে শিক্ষকদের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়তে বাধা দিচ্ছে? কারা শিক্ষার মেরুদন্ডকে সোজা করতে বাধা দিচ্ছে? তারা চায় না এ জাতি প্রকৃত অর্থে আদর্শ নিয়ে শিক্ষিত হোক? কারা ইউনুস সরকারের উপর অদৃশ্য ছায়া হিসেবে ভৌতিক হুমকি দিচ্ছেন? জাতির সামনে পরিষ্কার করা দরকার।
ডক্টর ইউনুস এবং তাদের পর্ষদের ভবিষ্যৎ কি?
==============================
ডক্টর ইউনুস একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। বিশ্বের কোন পরাশক্তির রাষ্ট্রপ্রধান কে কল দিতে তাকে প্রটোকল মেনটেইন করতে হয় না। তিনি এমন মাপের মানুষ জন্যই তাকে জুলাই আন্দোলনের বিপ্লবীরা এই চেয়ারে বসিয়েছেন। তাকে এটা ভুলে গেলে চলবে না তার নোবেল পুরষ্কার কোনভাবেই এই সামান্য এক দেড় বছর রাষ্ট্র চালানোর চেয়ে ছোট নয়। তিনি যাবার সময় কি নিয়ে যাবেন? ১৮ কোটি মানুষের দোয়া নেবেন , সম্মান নেবেন নাকি ঘৃণা ভরে চিরতরে প্রত্যাখ্যান করা একজন অভিশপ্ত মানুষ হিসেবে বিদায় নিবেন? যার নোবেল পুরস্কারের সম্মান কিন্তু সামান্য কিছুদিনের রাষ্ট্র পরিচালনার ফলে কলুষিত হয়ে যাবে। তিনি নিজেও শিক্ষক ছিলেন। তিনি কি শিক্ষকদের বর্তমান ন্যূনতম সামান্য মর্যাদা দিতে পেরেছেন? একজন শিক্ষা উপদেষ্টার কথা শুনলে মনে হয় তিনি কখনোই শিক্ষক ছিলেন না বা শিক্ষকদের অভিভাবক ও হতে পারছেন না। মন্ত্রণালয়ের আমলা এবং সচিবদের অবারিত দুর্নীতি এবং ঘুষে জর্জরিত দেহগুলোর মন থেকে কখনোই যেন বের হয়ে আসে না যে শিক্ষকদের জন্য কিছু করা প্রয়োজন।
শেষ কথা--যারা জন্মের কথা ভুলে যায়
==========================
বেসরকারি শিক্ষকগণ তিনটি দাবি দিয়েছেন এটি খুবই যৎসামান্য, তারা সরকারি শিক্ষকদের মতো ৪৫% বাড়ি ভাড়া চাননি, সরকারি শিক্ষকদের মতো চিকিৎসা ভাতা বা অন্যান্য ভাতা ও সরকারি সুযোগ সুবিধার মতো সবকিছু সমান করতে বলেননি। তারা বৈষম্য কিছুটা কমিয়ে নিজেদের জীবনমানের উন্নতি করতে সরকারের কাছে দাবি করেছেন যা একান্ত নৈতিক এবং গ্রহণযোগ্য দাবি। সরকার, উপদেষ্টা এবং তাদের দুষ্ট প্রকৃতির আমলাদের কাছে কি মনে হয়, তারা কি ভিক্ষা করতে এসেছেন?
"পরিশেষে কিছু কথা না বললেই নয়, যারাই লঙ্কায় যায় তারাই রাবণ মনে করে নিজেদেরকে। রাষ্ট্রের কর্ণধারদের এটা মনে রাখা উচিত, শিক্ষকগণ ভিক্ষা চাইতে আপনাদের কাছে আসেনি। বরং আপনাদের মনে রাখা উচিত, এই বৃহৎ একটা গোষ্ঠীর কেউ না কেউ শিক্ষক হিসেবে আপনাদেরকেও মানুষ করেছে, শিক্ষা দিয়েছে, যে কারণে আজকে সর্বোচ্চ পদ থেকে বিভিন্ন পদে আপনারা আসীন। নিজেদের কে ত্রাণকর্তা ভাববেন না। আপনারা এ জাতির ত্রাণ কর্তা নন, বরং এ জাতির ত্রাণকর্তা এদেশের জনগণ। যাদের অর্থে, যাদের ট্যাক্স এর টাকায় আপনারা আলিশান বাড়িতে থাকেন, ভিআইপি গাড়িতে, প্রশাসনের প্রোটোকলে ঘোরেন -তার সবকিছুই এই জনতার। যারা আপনাদেরকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে এই চেয়ারগুলোতে বসতে দিয়েছে। তারা আজকে ভিক্ষা করতে এখানে হাজির হয়নি।"
আর যে বিষয়টি না বললেই নয়, ডঃ মুহম্মদ ইউনুস বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির এই মুহূর্তে শীর্ষে থাকা একজন ব্যক্তি, তিনি নিজে সহ যে শিক্ষা উপদেষ্টা তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য দিলেন, যে সচিব, আমলারা কুটকৌশল প্রয়োগ করছেন যাতে শিক্ষকদের ন্যূনতম দাবিও পূরণ না হয়, যে পুলিশ প্রশাসন নিজেদের ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করলেন-তাদেরকে বলছি, আপনারা জন্মের কথা ভুলে গেছেন। হ্যাঁ জন্ম-যে জন্ম আপনাদেরকে শিক্ষকগণ দিয়েছিলেন, আপনারা কোন না কোন শিক্ষকের হাত ধরে ক খ গ পড়ে শিক্ষিত হয়ে মানুষ হননি? নাকি অমানুষ হয়েছেন। তাহলে শিক্ষকদের রক্তাক্ত করলেন কেন? আপনারা আপনাদের সেই শিক্ষার জন্মের কথা ভুলে গেছেন। আর যদি আপনাদের নিজেদের এই জন্মের কথা এই শিক্ষিত হয়ে ওইসব চেয়ারে বসার কথা ভুলে না যেতেন তাহলে ঢাকায় অবস্থান করা শিক্ষকগণ প্রথম দিন যেদিন এসেছিলেন সেদিনই তাদের দাবি মেনে তাদেরকে শ্রেণীকক্ষে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন। আর যতক্ষণ না করছেন ততক্ষণ আপনারা আপনাদের নিজেদের জন্ম ভুলে থাকা মানুষ এটি প্রমাণ করছেন। আর এর মাধ্যমে হয়তো এমন ব্যবস্থা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি করবে যার ফলে আপনারা ভবিষ্যৎ ইতিহাসের আস্তা কুরে নিক্ষিপ্ত হবেন। যা সহজেই নিষ্পত্তি করা যায়, তা জটিল করলে প্রত্যেকটি ঘটনাই আপনার নিজেদের জীবনে ফিরে আসবে।
ইতিহাস কখনো কাউকে ক্ষমা করে নাই, ভবিষ্যতেও করবে না। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির অনেক বড় বড় শক্তিধর মানুষের অনেকেই আজ পৃথিবীতে বেঁচে নেই, শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ কিংবা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সবাই তার ক্ষমতা থেকে চলে গেছে। কিন্তু কেউ শ্রদ্ধা নিয়ে গেছে, আশীর্বাদ নিয়ে গেছে, আবার কেউ কেউ মানুষের থুথু, ঘৃণা এবং আজন্ম অভিশাপ নিয়ে চলে গেছেন। আপনারা কোন পথে যাবেন, তার সিদ্ধান্ত আপনারাই নেবেন-জনগণন নয়। আর জনগণ সিদ্ধান্ত নিলে কি হয়, স্মরণ করে দেখুন ৫ আগস্ট ২০২৪, তার ফসল হিসেবেই কিন্তু আপনারা আজ এই ক্ষমতার মসনদে। সুতরাং কারো প্ররোচনায়, বা কারো ইন্ধনে, বা কারো পরামর্শে শিক্ষকদের নৈতিক দাবি পূরণ না করলে তার যথার্থ দায় যাই ঘটুক না কেন আপনাদেরকেই নিতে হবে, এমন কথা বলা মনে হয় খুব বেশি বলা হবে না।
লেখকঃ শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট।